![]() |
| জর্জ ক্লিনটন |
![]() |
| সিদ্ধার্ধ'স গেট (Siddhartha's Gate) এর অনুষ্ঠানে |
![]() |
| জর্জ ক্লিনটন এর স্টেজ পারফরমেন্স |
![]() |
| জর্জ ক্লিনটনের সঙ্গে আমি, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৩ |
আত্নজৈবনিক, ভ্রমণভিত্তিক,ও বিবিধ...
![]() |
| জর্জ ক্লিনটন |
![]() |
| সিদ্ধার্ধ'স গেট (Siddhartha's Gate) এর অনুষ্ঠানে |
![]() |
| জর্জ ক্লিনটন এর স্টেজ পারফরমেন্স |
![]() |
| জর্জ ক্লিনটনের সঙ্গে আমি, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৩ |

১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার কাছে একটি নিমন্ত্রণপত্র এলো; তাতে লেখা, "Harvard Center for Population and Development Studies invites you to a Birthday party for Bangladesh".
আমি তখন আমেরিকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশীপ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে পড়ালেখা করছি। এই ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার কিছু নেই। আমেরিকার কেমবৃজ ও বস্টন শহর জুড়ে এই ইনিভার্সিটির ক্যাম্পাস, পৃথিবী-জোড়া সুখ্যাতি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অন্যতম প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠ। সর্বমোট তেতাল্লিশজন নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী-শিক্ষক আছেন এখানে, এবং প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়ছে। কেমবৃজ শহরে হার্ভার্ড স্কয়ারে কফি শপগুলোতে ঢুকতে গেলে কোন নোবেল
লরিয়েটের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে- এরকম কৌতুকও চালু আছে। এই ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট রিং বা আংটির বিজ্ঞাপন দেয়া হয় এভাবে-
‘প্রতি চারজন আমেরিকানের একটি করে বাড়ি আছে,
প্রতি একশজনের একটি করে জেট,
প্রতি ২৪০ জনের একটি করে ইয়ট-
কিন্তু প্রতি ১৭ হাজার আকেরিকানের একজন মাত্র এই আংটিটি পরতে পারেন।’
সেই হার্ভার্ডের ক্যাম্পাসে পালিত হবে বাংলাদেশের পচিশতম জন্মবার্ষিকী! তাতে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও জাতীয় উন্নয়নের ওপর আলোচনা ও নৈশভোজ। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু নৈশভোজ শুধু আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য। আমার কাছে এই রহস্যটি এখনও অজানা যে, আমি কী করে সেই নৈশভোজে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম! কেন এটি বিষ্ময়কর তা আমন্ত্রিত অতিথিদের নাম জানলেই পরিস্কার হয়ে যাবে। প্রতিটি চেয়ারে আমন্ত্রিত অথিতিদের নাম শেষ নামের আদ্যাক্ষর অনুসারে সাজানো। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিবৃন্দ। আমার অফিসিয়াল নামের প্রথম অক্ষর ’আর’। সেকারনেই আমার ডান পাশে বসেছেন অমর্ত্য সেন, বাম পাশে বস্টন ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রফেসর দম্পত্তি হান্না ও গুস্তাফ পাপানেক। অমর্ত্য সেন তখন নোবেল পুরস্কার না পেলেও ইউনিভার্সিটি চত্বরে সবার মুখে মুখে শোনা যায় তাঁর নাম, একারনে যে নোবেল পাওয়া তাঁর জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমি হেলথ পলিসি বিষয়ে পড়ার সুবাদে তাঁর অর্থনীতি বিষয়ে লেখা এবং ব্যক্তিগত আগ্রহের জন্যে তাঁর দর্শন বিষয়ক লেখাগুলোর সঙ্গে পরিচিত। কখনো কেমবৃজ ক্যাম্পাসে তাঁর ক্লাসে বসে শুনেছি ওয়েলফেয়ার ইকোনমিক্স নিয়ে তাঁর তুখোর ও রসালো বক্তব্য। রসালো বলার কারণ হলো, তিনি অসাধারণ বাকপটু এবং মারাত্নক কথাগুলো রসিকতা করে বলতে পারেন। যেমন এই অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে যখন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান এবং ড. আবু আবদুল্লাহ বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী বক্তব্য রাখলেন, অমর্ত্য সেন শুরুতেই বাঙালির অতিরঞ্জন প্রিয়তার প্রতি ইঙ্গিত করে রামমোহন রায়ের গানটি শুনিয়ে দিলেনঃ
’মনে করো শেষের সেদিন ভয়ংকর
অন্য বাক্য কবে কিছু তুমিই রবে নিরুত্তর।’
অর্থাৎ একমাত্র মৃত্যু হলেই আমরা মুখ বন্ধ রাখি। যা হোক, সেই অমর্ত্য সেন পাশে বসেছেন। আমি অনেকটা আনন্দে দিশেহারা। নৈশভোজে আরও এসেছেন হার্ভার্ডের প্রফেসর লিংকন চেন, মার্টি চেন, রিচার্ড ক্যাশ, ওমর রহমান (যিনি বর্তমানে বাংলাদেশে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, এবং আমার একাডেমিক আদর্শ), এম আই টি’র প্রফেসর রিচার্ড তাব্যুর। আরও এসেছেন ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্লড রিপোর্টের সাংবাদিক এমিলি ম্যাকফার কোহার। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ডক্টর রেহমান সোবহান, এবং ডক্টর আবু আবদুল্লাহ। এখানে আমন্ত্রিত আমেরিকান নাগরিকদের সবাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কোন না কোন ভাবে অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকান সরকারের ভূমিকা সম্পূর্ণ বিরোধী হওয়া সত্বেও এই দেশের অনেক বিবেকবান, মহৎ নাগরিক নিজস্ব তাগিদে অসামান্য অবদান রেখেছেন। মানবতার প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানানোর এই অবদানগুলোর কথা বলতে গেলেই ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত পন্ডিত রবি শংকর ও জর্জ হ্যারিসনের কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর গানটির কথা চলে আসে সবাগ্রে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আমেরিকাতে প্রথম কনসার্টটি করেছিলেন ওস্তাদ আকবর আলী খান, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ক্যাম্পাসে মে মাসের ২৮ তারিখে। তারপরই শিল্পী জোন বেজ দুটি কনসার্ট করেন- একটি স্ট্যানফোর্ড ক্যাম্পাসে, অন্যটি মিশিগান ইউনিভার্সিটির অ্যান আরবর ক্যাম্পাসে। দুটি ক্যাম্পাসেই ১৫ থেকে ২০ হাজারের মতো লোক সংখ্যা ছিল।
এই শিল্পী গেয়েছিলেন সেই গানটিঃ
'When the sun shines in the West
Die a million people in Bangladesh"
এই গানটির কথা আমরা হয়তো অনেকেই জানি না। সঙ্গীতের বিশ্বজনীন আবেদন নিয়ে এ শিল্পীরা আমাদের আবেগ-অনুভূতির মর্মমূলে নাড়া দিয়েছিলেন বলেই মনে হয় এ ঘটনাগুলো আমাদের সবার স্মৃতিতে অমর হয়ে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের অনেকেই ছিলেন যাদের এই শিল্পের ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু অসামান্য হৃদয়বোধ, মানবিক উৎকর্ষতা নিয়ে তারা সমর্থন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে। সেই সমর্থনের ভাষাও কখনো কখনো হয়ে উঠেছিল শিল্পের সমতূল্য। আজকের অনুষ্ঠানে তাদের অনেকেই উপস্থিত।
পাপানেক দম্পত্তি মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সমর্থনে কাজ করেছেন। বস্টন ইউনিভার্সিটির বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই পাকিস্তানের বাধা দেয়ার কারণে দেশ থেকে টাকা পয়সা পাচ্ছিলেন না। এই দম্পতি নিজেদের বেতনসহ আরও অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, গুস্তাফ পাপানেক অন্য দুজন লেখকের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একটি পজিশন পেপার লিখেছিলেন। তখন নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ এই দম্পতির ঘটনা ছাপা হবার পর এই সহৃদয় যুগল চাকরী হারান। এঁরা দীর্ঘ সময় হার্ভার্ডের সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। এই হান্না পাপানেক অনুষ্ঠানের শুরুতেই আক্ষেপ করে বললেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র পচিশ বছর পরেই বাংলাদেশের তরুন প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলে তিনি হতাশ হয়েছেন; তাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন আগ্রহই নেই। তিনি এই তরুন প্রজন্মের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তনয় জয়ের কথাও উল্লেখ করলেন।
আমি ততোক্ষণে এই অষ্ঠবজ্র সম্মেলনের ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠেছি। হান্না পাপানেকের এই কথার পর আমি হাত তুললাম। বললাম, আমি বিনয়ের সঙ্গে এই কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল চার-পাঁচ বছর। সেই অর্থে আমিও তরুন প্রজন্ম। অথচ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ অপরিসীম, এবং অনেক তরুন তরুনীই আমার মতো। আরো বললাম, মুক্তিযুদ্ধ আমার কতোটা অন্তর্গত বিষয় তার প্রমাণ হলো আমার লেখা প্রকাশিত ১৫ টি গ্রন্থের প্রায় অর্ধেকই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক। এর মধ্য অপারেশন জ্যাকপট ও মুক্তিযুদ্ধের সেরা লড়াই দুটি প্রমাণ্য গ্রন্থ। (এখানে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় তার জীবনে যে অপরিসীম দুঃখ পেয়েছেন আত্নীয় পরিজন হারিয়ে, তাতে তার অভিমান হলেও দোষ দেয়া যায় না, যে অভিমান আমারও আছে। একদিন হয়তো সেই অভিমানের আগুন বুকে নিয়ে এই নতুন প্রজন্মই বাংলাদেশের নেতৃত্বের হাল ধরবে, আজকে জয়ের সেই অগ্নিময় প্রস্তুতি আমরা দেখতে পাই)।
ডক্টর রেহমান সোবহান সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সমর্থন জানিয়ে বললেন যে, তিনি অপারেশন জ্যাকপট বইটি সম্পর্কে অবহিত কিন্তু এটা জানতেন না যে লেখক বয়সে এতো তরুন।
হান্না পাপানেক সহাস্যে বললেন, তাহলে আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সিলভার জুবিলি-তে বাংলাদেশের কেকটি কাটার দায়িত্ব তোমার এবং তুমিই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইবে। সকলেই উঠে দাঁড়ালেন। আমি কেক কাটলাম যাতে বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা। প্রাণ খুলে গাইলাম, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। অবাক ব্যাপার হল এখানে উপস্থিত অনেক আমেরিকানই গলা মেলালেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে। আবেগে, আনন্দে আমার দুচোখ বেয়ে নেমে এলো খুশীর অশ্রুধারা!
ষাটের দশকে ঢাকায় SEATO কলেরা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল যার বর্তমান নাম আই সি ডি ডি আর, বি। এখানে একদল চিকিৎসক গবেষেক ছিলেন যাদের মধ্য অন্যতম জিম টেলর, তাঁর স্ত্রী অ্যানা টেলর, লিংকন চেন, মার্টি চেন, রিচার্ড ক্যাশ, জন রড, কর্নেলিয়া রড, হেনরি মোসলে, ডেভিড নালিন, উইলিয়াম গৃনাফ এবং রবার্ট হির্শনে। ঢাকায় ২৫ মার্চের পাকিস্তানি আক্রমণের পর এরা সবাই বাংলাদেশ ত্যাগ করে আমেরিকায় চলে আসেন এবং হার্ভার্ড, জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত ছিলেন। এখান থেকেই নানান ফোরামে, নানানভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানাতে থাকেন। এঁদের মধ্য লিংকন চেন এবং রিচার্ড ক্যাশ পরবর্তীতে আমার সরাসরি শিক্ষক হয়েছিলেন। তাঁদের কথায় আসার আগে টেলর দম্পতির কথা বলে নিই। জিম এবং অ্যানা টেলর দুজনেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বাত্নক সমর্থন দিয়েছিলেন, প্রতিবাদের প্রথম স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিলেন আমেরিকার বুকে। বিশেষ করে অ্যানা টেলর মার্চের কালো রাতের ভয়াবহতা জানার পর পর মে মাসেই দুবার প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছিলেন ওয়াসিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে এবং পাকিস্তান অ্যাম্বাসির সামনে। শুধু তাই নয়, এই চিকিৎসক দম্পতি হোয়াইট হাউসের সামনে ম্যানহোলের ভেতরে রাত কাটিয়েছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষকে বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা বোঝানোর জন্য যে এভাবে ভারতীয় শরণার্থী শিবিরে পাইপের ভেতরে জীবন যাপন করছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরা!
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যতগুলো রিপোর্ট বা পজিশন পেপার জমা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী লেখাটি লিখেছিলেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির তিনজন শিক্ষক; এডওয়ার্ড মেসন, রবার্ট ডর্ফম্যান এবং স্টিফেন মার্গলিন। ২৫ মার্চের কালো রাতে যখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর চলছে নির্মম ব্রাশফায়ার, বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে আমেরিকান সরকার সরাসরি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের বর্বর শাসকগোষ্ঠীকে, তখন এপ্রিল মাসে তাঁদের এই লেখাটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তারলাভ করতে সমর্থ হয়েছিল আমেরিকার রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবি মহলে।
লেখাটির শুরুই হয়েছিল এভাবেঃ "The Indepence of East Pakistan is Inevitable" শুধু তাই নয়, এ লেখাতেই প্রথম Bangladesh কে একটি আলাদা শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয়; Indipendence of East Pakistan-Bangladesh is a matter of time.
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এটি একটি অসামান্য অবদান। এই লেখা আমেরিকার সিনেটের সাবকমিটিতে পাঠানো হয়। ডক্টর মেসন স্বাধীনতার পরবর্তীকালেও বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন। তাঁর নামে প্রবর্তিত মেসন প্রোগ্রামে বাংলাদেশের অনেক সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষ করে সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তা বিশেষ ট্রেনিং নিতে আমেরিকায় এসেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে।
চাইনিজ বংশোদ্ভূত চিকিৎসক এবং পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ লিংকন চেন এবং তাঁর স্ত্রী মার্টি চেন, একই পেশার জন রড ও তাঁর স্ত্রী কর্নেলিয়া রড ছিলেন বাংলাদেশের একনিষ্ঠ সমর্থক। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে তাদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় লিংকন চেন ও জন রড পৃথিবীর অন্যতম খ্যাতনামা জার্নাল ল্যানসেট-এ বাংলাদেশের ওপরে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এটি আমেরিকার অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নজরে আসে। অক্টোবর মাসে সিনেটের কেনেডি এই রিপোর্ট প্রবন্ধের ওপরে একটি শুনানীর আয়োজন করেন। সেখানে এই প্রবন্ধের আরো বিস্তারিত বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা দেন ডক্টর রিচার্ড ক্যাশ। মার্টিন চেন ও জন রড স্বাধীনতার পরবর্তীকালেও বাংলাদেশের এন জি ও সেক্টরে সক্রিয় অবদান রেখেছেন।
চিরকুমার রিচার্ড ক্যাশ একজন মানব দরদি চিকিৎসাবিদ ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ। আমরা ছাত্রেরা তাঁকে নাম দিয়েছিলাম ক্যাশলাদেশ। অর্থাৎ ক্যাশ + বাংলাদেশ = ক্যাশলাদেশ। এর যথার্থ কারণও ছিল। তাঁর প্রতিটি ক্লাসে, উদাহরণে বাংলাদেশের ঘটনা, কখনো দুই একটা বাংলা শব্দ বা বাক্যও চলে আসতো তাঁর মুখে। কেমব্রীজ শহরে তার বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম কয়েকবার। ঘরের সাজানো প্রতিটি জিনিশ বাংলাদেশের বা আফ্রিকার কোন দেশের। এমন কি তার প্রতিদিনের শয্যার ওপরে আমেরিকান কমফোর্টার এর বদলে শোভা পায় বাংলাদেশের আড়ং এর তৈরি নকশীকাঁথা। বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন শুধু মুক্তিযুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকে নি, তার জীবনের প্রাত্যহিকতার মধ্যে, জীবন দর্শনের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠান শেষে সবার সঙ্গে আলাদা আলাপকালে কথা হলো। অমর্ত্য সেন স্নেহের ভঙ্গিতে পড়ালেখার খোঁজ-খবর নিলেন। বললেন, আমার সেক্রেটারিকে ফোন করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নিও (যা আর কখনও করা হয় নি), আর আমি কেমব্রীজ এর খোলা চত্বরে বেড়িয়ে আমার বুকের উথাল-পাথাল ঝড় কে অনুভব করি। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে বাংলাদেশের জন্মবার্ষিকী পালন করছি বিশ্বময় খ্যাতিমান এই মানুষগুলোর সঙ্গে। এই আনন্দের মর্মাথ আরও গভীর হলো, খোলাসা হলো আমার কাছে যখন একই বছরের অক্টোবরে ঘটে-যাওয়া আরেকটি ঘটনা মনে পড়লো। সে ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা!
১৯৯৬ সালে ঠিক এই সময়ে জাতি সংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পর পরই হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে অক্টোবর মাসের ২৬ তারিখে তিনি কেমব্রীজ ক্যাম্পাসে বক্তব্য রাখেন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক, সময়পোযোগী বক্তৃতা। বিশেষ করে বাংলাদেশের সামরিক শাসনের পরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য। এখানে তিনি প্রচন্ড আবেগময়, আবার রাজনৈতিকভাবে তেজি একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট কেনেডির সেই বিখ্যাত উক্তিঃ
‘Let every nations know ...whether it wishes us well or ill..
that we shall pay any price, bear any burden, meet any hardship, support any friend, oppose any foe,to assure the survival and success of liberty..."
আর এই বক্তৃতা তিনি শেষ করেছিলেন আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট এর সেই বিখ্যাত লাইন দিয়েঃ
"I have promises to keep and miles to go before sleep"
এই আবেগঘন এবং প্রাণস্পর্শী বক্তব্যের পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে আমি প্রথম প্রশ্নটি করেছিলাম। আমার প্রশ্নটি ছিল, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় অনেক, কিন্তু তা রাখা হয় না। আপনার সরকার বাংলাদেশে একটি উপযুক্ত স্বাস্থ্যনীতির কথা বলে আসছে বহুদিন থেকে। কবে আমরা একটি আধুনিক, এবং সময়োপযোগী স্বাস্থ্যনীতি পবো? তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিলেন। এখন, এতো বছর পরও আমরা তাঁর উদ্দেশ্য সেই একই প্রশ্ন ও দাবি রাখতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তৃতা ছাড়াও আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্ব ঘটনা ঘটে একই সময়ে, যার সঙ্গে আমার প্রথমে বর্ণিত ঘটনার একটা গভীর যোগসূত্র আছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন কে কেন্দ্র করে বস্টনে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্য থেকে একটি উদ্যোগ নেয়ে হয় যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে সব হূদয়বান আমেরিকান নাগরিক সরাসরি সাহায্য করেছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তাঁদেরকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ সম্মাননা দেয়া হবে। বস্টনের টাফট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সে রকম সতেরজন আমেরিকানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। হার্ভার্ডের বাংলাদেশের জন্মদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই ছাড়াও, আরেকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন প্রফেসর রবার্ট রাইন। যিনি ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকান আইনকে ফাঁকি দিয়ে ৯৬ হাজার ডলারের যন্ত্র-সরঞ্জাম মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে পাঠিয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় আওয়ামীলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এই মহতি উদ্যোগের পেছনে যে মানুষটি মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি হলেন তৎকালীন বোস্টন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, বর্তমানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ডক্টর আবদুল মোমেন। তাঁর যোগাযোগ ও পরিকল্পণার মধ্য দিয়ে সব কিছু আগালেও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় রাজনীতির কারণে তাঁকে এই অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল, যা আমার মনে এখনও পীড়া দেয় এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগের জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আমি মানপত্র টি লিখেছিলাম এবং তা পাঠ করেছিলাম। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছিলেন মঞ্জু বিশ্বাস ও ইকবাল হোসেন। এখানে এই অনুষ্ঠানে সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন অসামান্য আমেরিকানদের হাতে বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতার নিদর্শন সরূপ ক্রেস্ট তুলে দিয়েছিলেন। এখানে উল্লেখকরা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির দাবিতে যখন স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয় এবং তা জাতিসংঘে পাঠানো হয়, সেই অনুষ্ঠানের জন্য আমি ’কালো কালো মানুষের দেশে’ গানটি লিখি এবং সেই গানের কপিও তাঁকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেই নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পর যে কয়েকটি দেশ সফর করেছিলেন বাংলাদেশ ছিল তার মধ্য একটি। এভাবে একটি জাতি তা যত ছোট হোক বা বড় হোক তার কর্মের মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞতার স্বীকৃতি দিয়ে পারে। বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকার মাটিতে সেই মহান কাজ টি সম্পন্ন করেছিলেন, এজন্য তিনি চিরকাল জাতির বিবেকের ভূমিকা নেয়ার জন্য প্রসংশিত হবেন, স্মরণীয় থাকবেন। সেইদিনের সেই অনুষ্ঠান শেষে তাই মুক্ত বাতাসে গলা ছেড়ে বলে উঠতে পেরেছিলাম,
’আমি এখন মঙ্গলগ্রহের গোলাপি আকাশকে ছুয়ে নিই তৃপ্তির শ্বাস
আমার পায়ের নিচের সোদা মাটি, মুক্ত আকাশ আমাকে পৌছে দেয় বিশ্বময়;
কারণ আমি পেয়েছি আজ স্বাধীন বাংলাদেশ।’
এই স্বাধীনতা, এই মুক্তির অহংকারকে চিরজীবী রাখতে হবে আমাদেরই।
[পুনশ্চঃ বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এখন শুধু আমেরকানদেরই নয়, সারা পৃথিবী থেকে এরকম ১০০ জন কে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা আশা করি তা যেন বাস্তবায়িত হয়]
লেখা পূর্ব-প্রকাশিত, যায় যায় দিন, খবর ডট কম)







হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে কথা বলতে গেলে বা লিখতে গেলে আমি এক ধরনের আবিস্কারের আনন্দ অনুভব করি। আজকে তাঁর প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয়তা বা খ্যাতির বাইরে এক অন্য ধরনের আবিস্কারের আনন্দ, একজন মানুষকে আবিস্কারের আনন্দ। তাঁর লেখা নিয়ে হয়তো বা সবসময় একরকম মন্তব্য করবো না, কিন্তু আবিস্কারের সুখটুকু চিরকাল তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবো। কেন করি সেকথা শুনে আমাকে কেউ নার্সিসিস্ট বা আত্নপ্রেমিক বললেও কোন আপত্তি নেই। তবে এই স্বল্প পরিসরের লেখায় হঠাৎ হুমায়ূন আহমেদ কেন? তার কারণ সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশিত এবং যায়যায়দিনে পুনঃপ্রকাশিত তাঁর খুব ছোট্ট একটি লেখা হায়রে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে কিছু বলার আগে আমার আবিস্কারের গল্পটি বলে নিই।
ঠাট্টা করে বললেও কথাটা তো তখন সত্যি ছিল। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম কিশোর রহস্য গল্প সংকলনের কাজে। আমার উৎসাহ আরো বেশী, কারণ আমার মৌলিক ছড়াগ্রন্থ হাবিজাবি বের হবে একই সঙ্গে। তাছাড়া সেই প্রথম জানলাম লেখক হুমায়ুন আহমেদ এবং মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার সহোদর। যাকে সেই ছোটবেলায় খুঁজে বের করার পণ করেছিলাম তিনি হাতের নাগালে, এতো সহজে। আহসান হাবীব সাবধান করে দিয়ে বললেন,’আপনি সম্পাদক, আপনার দায়িত্ব আমার ভাইয়ের কাছে থেকে গল্প আদায় করা। এই কাজে সফল হওয়া অনেকটা পুলসেরাত পার হওয়ার সমান।’ পুলসেরাত পার হলাম। উননব্বই এর বইমেলায় শওকত ওসমান, শওকত আলী, রাহাত খান, হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন সহ দশজন গল্পকারের দশটি আনকোরা গল্প নিয়ে বের হলো কিশোর রহস্য গল্প। সেই সঙ্গে অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আমার ছড়াগ্রন্থ হাবিজাবি।
তার মেফ্লাওয়ার সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। একদিন তার বাসায় গিয়েছি, ঠিক তখনই প্রকাশক লেখক কপি পৌছে দিলেন বাসায়। সেখান থেকে একটি কপি দিলেন তিনি । তখন হস্টেলে থাকি। বইটি পড়েই পেলাম একটি বড় তথ্যগত ভুল। লেখা আছে আমেরিকায় ডঃ ক্লার্কের বাসায় অনেক দূর্লভ জিনিসের মধ্যে দু’হাজার বছরের পুরনো কোরান শরিফের পাতা। হস্টেলের কয়েন বক্স থেকেই সাথে সাথে ফোন করলাম। কোরান শরিফের বয়সই তখন দুহাজার বছর হয়নি। তিনি বললেন ভালো বলেছো, এক্ষুনি পাবলিশারকে ফরমাটা নতুন করে ছাপতে বলি। কিম্বা কোথাও কেউ নেই নাটকের রিহার্সেল হচ্ছে বিটিভির একটি কক্ষে। হঠাৎ তুমুল বিতর্ক শুরু হলো। একপক্ষে অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, হুমায়ুন ফরীদি, সূবর্ণা মুস্তাফা অন্যদিকে হুমায়ুন আহমেদ। অভিনেতাদের বক্তব্য হলো টিভির বাংলা নাটকের একটি স্ট্যান্ডার্ড, শুদ্ধ ভাষা থাকা উচিত। হুমায়ুন আহমেদের বক্তব্য না, নাটকের ভাষা হবে আমাদের মুখের ভাষা। কথ্য ভাষা। দু’পক্ষেরই অকাট্য যুক্তি। কিন্তু কেউ মনে হচ্ছিল আসল কথাটা বলে নাট্যকারকে চটাতে চাচ্ছিলেন না। আমি সেখানে দর্শকমাত্র। আমার স্ত্রী, তৃষ্ণা মাহমুদ একজন অভিনয় শিল্পী ঐ নাটকে। আমি তার ড্রাইভার বলা যায়। সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়লাম বিতর্কে। হুমায়ুন আহমেদকে উদ্দেশ করে বললাম, ’নাটকে কথ্য ভাষা থাকবে ভালো, কিন্তু একেকজন একেকরকম কথ্য ভাষা ব্যবহার করতে থাকলে একসময় ভাষাটাই একটা জগাখিচুরিতে পরিনত হয়। সাহিত্যের একটি বড় দায়িত্ব ভাষাকে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হতে দেয়া। তাছাড়া লোকভাষারও শুদ্ধ রূপ আছে। অথচ আমরা লোকভাষার নামে আঞ্চলিকতাদুষ্ট ভাষা ব্যবহার করছি। যেমন আপনার লেখায় শুনা, উঠা, পুড়ানো ইত্যাদি, সমাপিকা আর অসমাপিকা ক্রিয়ার উলটো ব্যবহার দেখা যায়।’হল ভর্তি লোক স্তম্ভিত আমার স্পর্ধা দেখে। আমি বুঝতে পারছি না বাসায় যতই হুমায়ুন ভাই বলি না কেন, এতো লোকের সামনে এভাবে বলাটা ঠিক হলো কি না। তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন, হ্যা, সেজান ঠিকই বলেছো। আমার লেখার এটা ময়মনসিংহের আঞ্চলিকতার দোষ। সেদিন থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেলো।
[ সেপ্টেম্বর ১, ২০০৯ তারিখে খবর ডট কম-এ সোয়াইন ফ্লু ইনফেকশন নিয়ে উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা করা উচিত, বিশেষ করে শিশু বা গর্ভবতী মাদের, তা নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। গত সেপ্টেম্বর ২ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে দুই বিশেষজ্ঞ দুই রকমের মতামত দিয়েছেন। একজন বলছেন এক বছরের নিচের শিশুদের এটা চিকিৎসা দেয়া যাবে না, অন্যজন বলছেন যাবে। এই দ্বিমতের মূল কারণ সর্বশেষ নির্দেশনা না জানা। মূলত এই বিতর্ক নিরসনের জন্যেই লেখাটি লিখেছিলাম। এই লেখা পড়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক তরুন চিকিৎসক ইমেইল করেছেন, ফেসবুকে অনুরোধ করেছেন যেন ছোট-বড় সবার চিকিৎসার নির্দেশনা নিয়েই যেন একটি পূর্ণাঙ্গ লেখা লিখি, তাতে অনেকেই উপকৃত হবেন। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ও ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফ, ডি, এ) ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের ভিত্তিতে এই লেখা মূলত চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য লিখলাম। তবে সাধারণ পাঠকেরাও উপকৃত হবেন- সেজান মাহমুদ]
সাবান দিয়ে ধোয়া, বিশেষ করে কাশি বা হাঁচির পর; চোখ, নাক, মুখ হাত দিয়ে না ধরা, অসুস্থ হলে (ফ্লু'র মতো) কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা ঘরে থাকা, খুব জরুরী না হলে বাইরে বের না হওয়া, ঘর-বাড়ির সাধারণ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ইত্যাদি। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো স্বল্প সুবিধার দেশে শুধু লক্ষণ থেকেই উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের চিকিৎসা দেয়া জরুরী। প্রথমে এই শ্রেনীর মধ্যে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের চিকিৎসার নীতি কি হবে?এক. ট্যামিফ্লু (ওসেলটামিভির) শুধু মাত্র এক বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের শিশুদের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে এক বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন ক্ষতিকর নয়। যেহেতু এক বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে এই সোয়াইন ভাইরাস মারাত্নক ক্ষতি করতে পারে তাই তাদেরকে নিম্নোক্ত চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে বলে অতি জরুরি অনুমোদন দেয়া হয়েছেঃ

ওষুধের নাম চিকিৎসা
ট্যামিফ্লু বা ওসেলটাভির পরিনত বয়সঃ
৭৫ মিলিগ্রাম ক্যাপ, দিনে দু’বার পাঁচ দিন
অতিরিক্ত তথ্যের জন্য পড়ুনঃ
